নাসার বিজ্ঞানীদের সূদীর্ঘ ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই রোভার যান কিউরিওসিটি।অবশষে সাড়ে আট মাসের এই দীর্ঘ অভিযানের পর মানুষের কিউরিওসিটি পূরন করতে কিউরিওসিটি এখন মঙ্গল পৃষ্ঠে।মঙ্গল গবেষনার ইতিহাসে এ অভিযান ই তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।এই প্রথম নাসা প্রায় এক টন ওজনের কোন রোবট যান মহাকাশ এর কোন গ্রহে সফল ভাবে নামাতে সক্ষম হল। আসুন জেনে নেওয়া যাক এ অভিযান সম্বন্ধে বিস্তারিত।
অভিযানটি শুরু হয় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভারেল থেকে।
আর এর গন্তব্য মঙ্গলের একটি গিরিখাদ “গেইল কার্টার”।
আগামী দুই বছর এটি গিরিখাদের তলা থেকে ধিরে ধিরে উপরে উঠবে এবং পরীক্ষা করে দেখবে এখানে প্রাণের বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা।এখানে অতীতে পানি থাকার অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে।
১২ বছরের প্রস্তুতি শেষে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৫০ কোটি ডলার।তবে সাফল্যের তুলনায় এ খরচ তেমন বেশী নয়।
কিউরিওসিটির গঠন >>
কিউরিওসিটির ভর ৮৯৯ কেজি,এর মধ্যে রয়েছে ৮০ কেজি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি।এটির দৈর্ঘ ২.৯ মিটার (৯.৫ফিট),প্রস্থ ২.৭ মিটার (৮.৯ ফিট) এবং উচ্চতা ২.২ মিটার (৭.২ ফিট)
এটির ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৭ টি ক্যামেরা রয়েছে।
পাথুরে মাটি খুঁড়ে দেখার জন্য রয়েছে শক্তিশালী ড্রিল মেশিন,রয়েছে পাথর চূর্ন বিচূর্ন করার মত শক্তিশালী লেজার রশ্মি।
পৃথিবীতে সংকেত পাঠাতে রয়েছে আন্টিনা,রয়েছে রাসায়নিক গবেষনাগার,বিকিরন মাপার ডিটেক্টর।মঙ্গল পৃষ্ঠে এর গতি খুবই কম,সর্বোচ্চ ৪ সেন্টিমিটার/সেকেন্ড।
একদম বৈজ্ঞানীক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা এই রোভার যান কিউরিওসিটি।
শক্তির উৎস >>
কিউরিওসিটির শক্তির উৎস Radioisotope Thermoelectric Generator (RTG),যেটাতে Plutonium-288 দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।Curiosity তে মোট ৪.৮ কেজি Plutonium-dioxide রয়েছে যা পুরো মিশনে অবিরাম প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করবে।শক্তির পরিমাণ প্রতিদিন ২.৫ কিলোওয়াট ঘণ্টা।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন >>
কিউরিওসিটি যেখানে নেমেছে সেখানকার তাপমাত্রা +৩০ ডিগ্রি থেকে -১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
কিউরিওসিটিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ,এটি ৬০ মিটার (২০০ ফিট) লম্বা পাইপ এর মধ্য দিয়ে উষ্ণ অথবা শীতল তরল চালনা করবে যা যানটির স্পর্শকাতর অংশ গুলোর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করবে ।
নিয়ন্ত্রন >>
কিউরিওসিটির রয়েছে ২ টি কম্পিউটার যাদের রয়েছে 256 kb EEPROM,256 mb of DRAM এবং 2 GB flash memory ।
মঙ্গল থেকে কিউরিওসিটি কৃত্রিম উপগ্রহর মাধ্যমে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করবে , মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে প্রতিটি সিগন্যাল পাঠাতে সময় লাগবে প্রায় ১৪ মিনিট ৬ সেকেন্ড।আর ডাটা ট্রান্সফার রেট হবে 256 kbit/s থেকে 2 mbit/s পর্যন্ত।তবে পৃথিবীর একটি কৃত্রিম উপগ্রহর সাথে কিউরিওসিটি প্রতিদিন সর্বোচ্চ যোগাযোগ করতে পারবে আট মিনিট।
উড্ডয়ন >>>
কিউরিওসিটি রোভার যানটি দুই ধাপে উড্ডয়ন হয়েছে ।
প্রথম ধাপে Atlas ( V-541) রকেটের সাহায্যে।
যার উচ্চতা ১৯১ ফিট (৫৮মিটার) প্রায় একটি ১৯ তলা বিল্ডিং এর সমান এবং ওজন ১.১৭ মিলিয়ন পাউন্ড (৫৩১০০০ কেজি)।মধ্যাকর্ষন অতিক্রম করতে এত বড় আকারের রকেটেরই প্রয়োজন ।প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে মঙ্গলের পথে যাত্রার জন্য ফুয়েল সমৃদ্ধ এ যানটি ছিল উপযুক্ত। Atlas V রকেট গুলো expandable launch vehicles (ELVs) নামে পরিচিত যা অর্থ তারা শুধু একবারই ব্যবহার যোগ্য।এই রকেটে ছিল চারটি সলিড রকেট বুষ্টার (ফুয়েল সমৃদ্ধ)।চারটি বুষ্টারের মধ্যে ছিল কেন্দ্রীয় বুষ্টার টি,আর ইঞ্জিন ছিল ঠিক তার উপরে।রকেট বুষ্টার চারটির কাজ ছিল প্রথম ধাপের উড্ডয়নে রকেটটিকে প্রচন্ড ধাক্কায় উপরের দিকে ঠেলে দেওয়া এবং পৃথিবীর মধ্যাকর্ষনকে অনিক্রম করা ।
দ্বিতীয় ধাপে Centaur,যেটি রকেটের ই একটা অংশ সেটি কিউরিওসিটিকে মঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়।
Centaur এর জ্বালানী হল লিকুইড হাইড্রোজেন এবং লিকুইড অক্সিজেন।প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ যখন কিউরিওসিটি সহ রকেট টি পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন শক্তি অতিক্রম করে কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে যাবে তখন চারটি রকেট বুষ্টার সহ প্রধান বুষ্টারটিও খুলে পরে যাবে।আর যখন দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হল তখন Centaur টি তার নিজস্ব হাইড্রোজেন জ্বালানী দিয়েই লাল গ্রহ মঙ্গলের দিকে নিয়ে গেছে কিউরিওসিটিকে।
পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে নিচের ছবিটির মত করে>
অবতরন >>
রোভার যান টি এ অভিযানে মোট ৩৫ কোটি ২০ লাখ মাইল পারি দিয়েছে।
মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করার আগে যানটির গতি ছিল ঘ্নটায় ১৩ হাজার ২০০ মাইল।মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের ১০ মিনিট পর Centaur থেকে বিচ্ছিন্ন হয় কিওরিওসিটি।
তারপর একটি সুপারসনিক প্যারাস্যুটের সাহায্যে এর গতি কমিয়ে আনা হয়।
কিছুক্ষন পর প্যারাস্যুটটি ও বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিওরিওসিটির সাথে যুক্ত ছিল একটি স্কাই ক্রেন যা মঙ্গল পৃষ্ঠ থেকে ২০ মিটার উপরে সক্রিয় হ্য়,তখন এটি .৭৫মিটার/সেকেন্ড গতিতে নিচের দিকে নামছিল।এর কয়েক সেকেন্ড পরেই ক্রেন থেকে ধিরে ধিরে কেবলের মাধ্যমে নামানো হয় কিউরিওসিটি কে।
এটি তখন ১.৭মিটার/ঘন্টা বেগে ৪১৬ সেকেন্ডে নিচে নেমে আসে।অবতরণের পর ক্রেন থেকে কিউরিওসিটি মুক্ত হয় এবং ক্রেন টি উড়ে গিয়ে দূরে পতিত হয়।পুরো ব্যাপারটা ঘটে নিচের ছবির মত করে>
কিউরিওসিটি মঙ্গলে মানুষ কিংবা জীবের অস্তিত্ব খুজে পাবে এমনটা আশা করেন না নাসার বিজ্ঞানীরা।তবে তারা আশা করছেন এটির সাহায্যে মঙ্গলের মাটি ও পাথর গবেষনা করে তাঁরা জানতে পারবে সেখানে অতীতে প্রানের অস্তিত্ব ছিল কি না।এ ছাড়া ভবিষ্যতে মানুষের যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না,তা-ও গবেষনা করে দেখবেন তারা।
তথ্য সংগ্রহ >
WIKIPEDIA
FIRST LIGHT
NASA চাচা
GOOGLE মামা
Related Posts